ভুমিকা
বাংলাদেশ মূলত একটি কৃষি নির্ভর অর্থনীতির দেশ। দেশের মোট উৎপাদনের (জিডিপি) ১৬% কৃষি থেকে আসে এবং মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক (প্রায় ৪৭%) কর্মক্ষম মানুষ খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। দেশের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে ওঠেনি যার অন্যতম কারন হল ডিজিটাল সাক্ষরতা ও সচেতনতা অভাব। বাংলাদেশে গ্রামীণ পর্যায়ে ৯৫.৯% পরিবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে এবং এর মধ্যে ৩১.১৫% স্মার্টফোন ব্যবহারকারী। যদিও ব্যবহারকারীদের মধ্যে মাত্র ১১.০৯% ডিজিটাল সাক্ষরতা জ্ঞান সম্পন্ন (সূত্র: বিআইজিডি, ডিসেম্বর ২০২০)। ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ ডিজিটাল এগ্রিকালচার অ্যাক্টিভিটি বাংলাদেশের মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাগুলোতে (এফটিএফ জোন) কৃষি ভ্যালুচেইন অ্যাক্টরদের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রয়োজনীয় ডিজিটাল সাক্ষরতা ও ডিজিটাল ট্যুল ব্যবহারে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
বাংলাদেশের কৃষক এবং কৃষি খাতে (মাঠফসল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) নিয়োজিত ভ্যালুচেইন অ্যাক্টরদের (কৃষক, কৃষি উপকরণ বিক্রেতা, উৎপাদিত পণ্যের ক্রেতা এবং স্থানীয় সেবাদানকারী) ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘ফ্যাসিলিটেটরস গাইড – ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রশিক্ষণ’ নামে এই প্রশিক্ষণ গাইডটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই গাইডটি ব্যবহার করে প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী কৃষক ও কৃষি ভ্যালুচেইন অ্যাক্টরদের ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ কার্যকরভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন। ফলে এটা অংশগ্রহণকারীদের ডিজিটাল কৃষি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে এবং কৃষিক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা সর্ম্পকে পরিষ্কার ধারনা দিবে।
উদ্দেশ্য
প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এই গাইডটি প্রণয়ন করা হয়েছে। গাইডটি কৃষক এবং ভ্যালুচেইন অ্যাক্টরদের ডিজিটাল জ্ঞান, দক্ষতা ও ডিভাইস ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেবে। যা প্রশিক্ষণের কাজকে সহজ ও সাবলীল করবে। এই গাইডটিতে বাংলাদেশের কৃষক এবং ভ্যালুচেইন অ্যাক্টরদের ডিজিটাল সাক্ষরতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক সকল প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু সমূহ (প্রশিক্ষণ পরিচালনা ও পদ্ধতিসমূহ, সেকশন বা প্রশিক্ষণ পর্ব পরিকল্পনা ও বিষয়বস্তু আলোচনা) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা অংশগ্রহণকারীদেরকে প্রশিক্ষণে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সহজভাবে শেখার সুযোগ প্রদান করবে। এটি ব্যবহার করে কৃষক এবং ভ্যালুচেইন অ্যাক্টরগণ খুব সহজেই ডিজিটাল ডিভাইস সমূহ বিশেষ করে স্মার্টফোনের মাধ্যমে অ্যাপভিত্তিক বিভিন্ন কৃষি পরামর্শ সেবা গ্রহণের উপায় ও ব্যবহার শিখতে পারবে।
এই গাইডে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের জন্য হাতে-কলমে শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এজন্য প্রতিটি বিষয়কে আলাদাভাবে বিভিন্ন সেকশনে ভাগ করা হয়েছে। সুতরাং, প্রতিটি সেকশন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রশিক্ষক সেকশনের সময়, অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা এবং তাদের প্রস্তুতির বিষয়টি মাথায় রেখে বিষয়বস্তুগুলো গুরুত্ব অনুসারে উপস্থাপন করবেন। https://agdigitalliteracy.com
এই গাইডটিতে প্রধানত নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করা হয়েছে-
- কৃষক ও কৃষি ভ্যালুচেইন অ্যাক্টরদেরকে ডিজিটাল কৃষি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, যেন তারা ডিজিটাল কৃষির গুরুত্ব ও সুবিধাগুলো বুঝতে পারে। পাশাপাশি তাদেরকে ডিজিটাল কৃষি বাস্তবায়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত উদ্যোগসমূহের সাথে পরিচিত করা।
- মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কীভাবে ‘ডিজিটাল কৃষি’ সংক্রান্ত পরামর্শ সেবাগুলো পাওয়া যায়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর সাথে ভ্যালুচেইন অ্যাক্টরদেরকে পরিচিত করা।
- ডিজিটাল কৃষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার এবং এর সুবিধাসমূহ বুঝিয়ে দেওয়া।
- মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কৃষি সেবা সংক্রান্ত ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশনের (অ্যাপ) ব্যবহার এবং এর সুবিধাসমূহ বুঝিয়ে দেওয়া।
- মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনে ও ডিজিটাল কৃষিতে মোবাইল আর্থিক সেবার (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) ব্যবহার শেখানো।
- মোবাইল আর্থিক সেবা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন করা।
- প্রশিক্ষিত ভ্যালুচেইন অ্যাক্টররা কীভাবে অন্য কৃষক বা অন্য অ্যাক্টরদের সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে তা বুঝিয়ে দেওয়া।